Sunday, 5 December 2021

আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সৌম্যের ‘আট’

 

আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সৌম্যের ‘আট’
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সৌম্যের ‘আট’

ক্রিকেট ডেস্ক::  সময়টা ২০১৪ সালের ১লা ডিসেম্বর। বাংলাদেশ বনাম জিম্বাবুয়ে ক্রিকেট দলের মধ্যকার পাঁচ ম্যাচ ওয়ানডে সিরিজের একে একে চার ম্যাচ গড়িয়ে গিয়েছে। তবে শুনলাম বাংলাদেশ দলে নাকি একজন পেস অলরাউন্ডার রাখা হয়েছে তাকে এখনো দলে দেখলাম না কেন?

 ইতিমধ্যে চার ম্যাচের সবকটি জয়লাভ করে সিরিজ নিজেদের করে নিয়েছে বাংলাদেশ তাইতো পঞ্চম ম্যাচটা তেমন গুরুত্বপূর্ণ নয়। তাহলে কি এই ম্যাচে দেখা যেতে পারে সেই অলরাউন্ডারকে। হলো ও তাই, পঞ্চম ওয়ানডের স্কোয়াড়ে নতুন একটা নাম দেখলাম নামের নিচে লিখা আছে অলরাউন্ডার। এতক্ষণে বুঝলাম এই সেই ছেলেটি যাকে আগের চার ম্যাচে খুজেছি। 

অভিষেক ম্যাচটা রাঙাতে পারেননি তিনি। আউট হওয়ার আগে করেছিলেন ১৮ বলে ২০ রান । তবে ম্যাচে কিছু দুরন্ত শর্ট খেলে জানান দিয়েছিলো নিজের আগমনী বার্তার। সেই ছেলেটি আর কেউ নয় বাংলাদেশ জাতীয় দলের অন্যতম সেরা হার্ডহিটার ব্যাটসম্যান সৌম্য সরকার। ২০১৪ সালের আজকের এইদিনে অভিষেক ঘটে তার, আজ পদার্পন করলো ক্রিকেট ক্যারিয়ারের অষ্টম বছরে।

 যদিও এর আগে ২০১৩ সালে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজের জন্য দলে ডাক পেয়ে ও মাঠে নামা হয়নি তার।

সামনে ২০১৫ বিশ্বকাপ এমন অবস্থায় অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ডের মাটিতে বাড়তি একজন পেসারের দরকার ছিলো বাংলাদেশের। সেই অভাবটা ও দূর হলো বটে বাংলাদেশ জাতীয় দলের তখনকার প্রধান কোচ চন্দ্রিকা হাতুরুসিংহে যে পেয়ে গেলেন সৌম্য সরকার নামক এক তরুণকে। 

লাইমলাইটের আলোয় চলে এলেন বিশ্বকাপের মঞ্চেই, নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে দুর্দান্ত এক ফিফটি আর দলের বিপর্যয়ে মাহমুদউল্লাহর সাথে ৯০ রানের এক দুর্দান্ত জুটি আর সঙ্গে ফিল্ডিংয়ে চার ক্যাচ নিয়ে বিশ্বকাপে এক ম্যাচে সর্বোচ্চ ক্যাচের রেকর্ডে নাম লিখালেন ভারতের কাইফের পাশে। তবে পারফরম্যান্স করলেও সেবার সবচেয়ে বেশি নজর কেড়েছিল তাঁর আইসিসি স্বীকৃত ‘পেরিস্কোপ শট’। বাউন্সারের পেরিস্কোপ শট খেলা এক সময় বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের জন্য ছিল লজ্জার। আর সৌম্য সেটিকে বিস্ময়কর গৌরবে পরিণত করেন।

সবকিছু যেন লুকিয়ে রেখেছিলেন তিনি বিশ্বকাপের পর ঘরের মাঠে ভারত, দক্ষিণ আফ্রিকা এবং পাকিস্তানের বিপক্ষে মাত্র ৯ ম্যাচে ৭১ গড়ে সৌম্য তোলেন ৪৯৭ রান। ‘

পেরিস্কোপ শট’কে রীতিমতো শিল্পের পর্যায়ে নিয়ে গেছেন তত দিনে। মরকেল-রাবাদার আগুনে বোলিংয়ের সামনে যেভাবে স্রেফ ‘হ্যান্ড-আই কোঅর্ডিনেশন’ দিয়েই রাজত্ব করেছেন জমিয়ে, বাংলাদেশ দলের ভবিষ্যৎ তারকা হিসেবেই দেখা হচ্ছিল তাঁকে।

সৌম্য সরকার যাকে জাতীয় দলের সবচেয়ে সেরা হার্ডহিটার ব্যাটসম্যান মানা হয়ে থাকে। দেশের হয়ে খেলেছেন অনেক ম্যাচ। কখনো ভয়-ডরহীন দুর্দান্ত ব্যাটিং কখনো ড্রিবলি ড্রিবলি পেসের মাধ্যমে প্রতিপক্ষ দলকে চাপে ফেলে দেন আবার কখনো দুরন্ত বোলিং করে দলের জন্য ব্রেক-থ্রো এনে দিতে পারেন।
 আবার কখনো দলের প্রয়োজনে ওপেনার থেকে শুরু করে আট নম্বর পজিশন পর্যন্ত ব্যাট করার সাহস রাখতে পারেন তিনি তো সৌম্য শান্ত সরকার। যিনি ব্যাটিংয়ে আসলে শান্ত রুপটা হারিয়ে অশান্ত হয়ে যায়।

জন্মগতভাবে সৌম্য ঠিক বাঁহাতি ছিলেন না। সৌরভ গাঙ্গুলি এবং ব্রায়ান লারাকে দেখেই হঠাৎ একদিন সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেন, বাঁহাতিই হতে হবে। ব্যস, সেদিন থেকে বাঁহাতি ব্যাটসম্যান বনে গেলেন সৌম্য। তবে বোলিংটা ডান হাতে বহাল তবিয়তে রইল। ২০১২ সালে অনূর্ধ্ব-১৯ এশিয়া কাপে কুয়েতের বিপক্ষে ১৩৫ বলে ২০৯ করেছিলেন সৌম্য। 

সেখানেই প্রথম নজরে আসা। হঠাৎ যেন নক্ষত্র পতন ভালো শুরু করেও আউট হয়ে যাচ্ছেন দ্রুত তবে ঘরের মাঠে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে করে বসলেন শতক। জাতীয় দলের কোচ স্টিভ রোডস বললেন, সেঞ্চুরি করেই তৃপ্ত না হয়ে বরং ইনিংস বড় করার চেষ্টা করতে সব জায়গায় ভালো পারফর্ম করতে। যেই কথা সেই কাজ, সৌম্য করে বসলেন দেশের হয়ে প্রথম ঘরোয়া ডাবল সেঞ্চরি। সুযোগ পেয়ে গেলেন ২০১৯ ইংল্যান্ডে অনুষ্ঠিত ওয়ানডে বিশ্বকাপে বাংলাদেশ দলে।

বিশ্বকাপের আগে আয়ারল্যান্ডের মাটিতে ট্রাই-নেশন্স সিরিজে তিন অর্ধশতকের পাশাপাশি দেশের হয়ে প্রথম আন্তর্জাতিক ট্রফি জয়ে রেখেছিলেন অবদান। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ফাইনালে ব্যাট হাতে করেছিলেন ৬৬ রান। বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ৪২ রানের ইনিংস খেলতে ব্যর্থ হয়েছেন পরের ম্যাচগুলোতে। 

তবে বিশ্বকাপের পর ঘরের মাঠে বিপিএলে হয়েছেন সেরা অলরাউন্ডার করেছিলেন ব্যাট হাতে ৩৩১ রান আর বল হাতে নিয়েছিলেন ১২ উইকেট যা বিপিএল ইতিহাসে কোনো অলরাউন্ডার করে দেখাতে পারে নি।

জাতীয় দলের হয়ে এখন পর্যন্ত তিনি ১৫ টেস্টে রান করেছেন চার অর্ধশতক আর ১ সেঞ্চুরিতে ৮১৮ রান। সর্বোচ্চ ইনিংস নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ১৪৯ রান উইকেট নিয়েছেন ৩টি।

 ৫৫ ওয়ানডে রান ১১ অর্ধশতক আর ২ সেঞ্চুরিতে ১৭২৮ সর্বোচ্চ ঘরের মাঠে পাকিস্তানের বিপক্ষে অপরাজিত ১২৭ ওয়ানডে উইকেট শিকার ৯টি। আর অন্যদিকে ৬৬ টি-টোয়েন্টি ম্যাচে ৫টি অর্ধশতকে রান ১১৩৬ সর্বোচ্চ জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে অপরাজিত ৬৮ এবং উইকেট শিকার করেছেন ৯টি।

দেশ সেরা অন্যতম এই হার্ডহিটার ব্যাটসম্যান ১৯৯৩ সালের ২৫শে ফেব্রুয়ারি খুলনা বিভাগের সাতক্ষীরা জেলার মহিষাডাঙ্গা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।

শেয়ার করুন

Author:

Etiam at libero iaculis, mollis justo non, blandit augue. Vestibulum sit amet sodales est, a lacinia ex. Suspendisse vel enim sagittis, volutpat sem eget, condimentum sem.

0 coment rios: