Wednesday, 15 March 2023

পাইকগাছায় মধুমিতা পার্কের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের নির্দেশনা মহামান্য হাইকোর্টের

 পাইকগাছায় মধুমিতা পার্কের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের নির্দেশনা মহামান্য হাইকোর্টের 

পূর্ণ চন্দ্র মন্ডল,পাইকগাছা::পাইকগাছায় বহুল আলোচিত মধুমিতা পার্কটির অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ নিয়ে বারংবার ধোঁয়শা কাটছে না। ভূমিখেকোরা এতটাই প্রভাবশালী যে এরা মহামান্য আদালতের নির্দেশেনা বা রায় থোরাই কেয়ার। সর্বশেষ গত ১৩ মার্চ' ২৩ শুনানি কালে মহামান্য হাইকোর্ট মামলার বিবাদিদের কে আগামী ৩.০৪.২০২৩ তারিখের মধ্যে মধুমিতা পার্কের সকল অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করে মধুমিতা পার্কটিকে পূর্বের অবস্থায় ফিরিয়ে দিতে মৌখিক নির্দেশ দিয়েছেন। 

এটি লিখিত আকারে পাওয়ার অপেক্ষায় রয়েছে এলাকাবাসী। সাধারণ মানুষ আদালতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। এবার তারা একটু আশার আলো দেখছেন। তবে বিগত দিনে অদৃশ্য কারণে রায় বাস্তবায়ন না হওয়ায় বিষয়টি নিয়ে এবারও চায়ের দোকান, কাপড় পট্টি, মাছ বাজার সহ সর্বত্র আলোচিত সমালোচিত হচ্ছে।

পাইকগাছা পৌরসভার প্রানকেন্দ্রে অবস্থিত মধুমিতা পার্ক। যা জনৈক মাদার মন্ডল তার স্বত্ব দখলীয় বাতিখালি মৌজার সাবেক ৯১খতিয়ানের ১৭১,১৭২ খতিয়ানের ১.০৭ একর জমি ভারত সরকারের নামে দান করেন। দানীয় জমিতে পুকুর খননের মাধ্যমে এলাকার মানুষের মিষ্টি পানির অভাব দূর হতে থাকে। ঐ পুকুরের পানি মিষ্টি হওয়ায় এলাকার লোকজন পুকুরটির নাম দেন মিষ্টি পুকুর। 

এরপর ১৯৮০ সালে তৎকালিন খুলনার বিভাগীয় কমিশনার মিষ্টি পুকুরটির সংরক্ষণের জন্য অর্থ বরাদ্দ দিয়ে সীমানা প্রাচীর নির্মাণ করেন। পরবর্তীতে খুলনার জেলা প্রশাসক নূরুল ইসলাম পুকুরটির প্রাচীরের মধ্যে চলাচলের জন্য চারিপাশে রাস্তা নির্মাণ, লোকজনের বসার জন্য পাকা বেঞ্চ, পাকা ঘাট সহ চারিপাশে বিভিন্ন ফল, ফুল ও বনজ গাছ রোপনের মাধ্যমে মনোরম পরিবেশ সৃষ্টি করেন।

স্থানটির নামকরণ করা হয় মধুমিতা পার্ক। যা উদ্বোধন করেন তৎকালিন জেলা প্রশাসক নূরুল ইসলাম। ঐ সময় থেকে পৌরবাসির একমাত্র চিত্তবিনোদন কেন্দ্র হয় মধুমিতা পার্ক এবং পার্কের অভ্যান্তরে থাকা মিষ্টি পানির পুকুরটি পৌরবাসির মিষ্টি পানির অভাব দূরীকরণের একমাত্র আধার হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। এ অবস্থায় মধুমিতা পার্ক ও মিষ্টি পুকুরের উপর কু-নজর পড়ে এক শ্রেণীর প্রভাবশালী, ভূমিখেকো, রাজনৈতিক নেতা-কর্মী ও ব্যবসায়ীদের। 

তারা  জেলা পরিষদের অসৎ কর্মচারীদের সাথে যোগাযোগে করে পার্কের প্রাচীর ও রাস্তা ভেঙ্গে পাকা দোকানঘর নির্মাণ করে। তখন পৌরসভায় সচেতন মহল মধুমিতা পার্ক সংরক্ষণ কমিটি গঠন করে প্রতিবাদ সভা, মানববন্ধন সহ কর্তৃপক্ষের কাছে পার্কটি সংরক্ষণের জন্য আবেদন-নিবেদন করতে থাকেন। ব্যর্থ হয়ে সহকারী জর্জ আদালত অবৈধ বন্দোবস্ত ও দখলকারিদের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা চেয়ে একটি মামলা করেন ও নিষেধাজ্ঞা পান। 

অবৈধ দখলকাররা তা অমান্য করে পেশি শক্তি বলে দোকানঘর নির্মাণ করে ব্যবসা করতে থাকেন। পরবর্তীতে পার্ক সংরক্ষণ কমিটি তৎকালিন জাতীয় সংসদের স্পীকারের শরণাপন্ন হন এবং তার পরামর্শে বিগত ২০০৫ সালে মহামান্য হাইকোর্টে একটি রিট পিটিশন দাখিল করেন। 

যার নং- ৩৫৯০/০৫। মহামান্য হাইকোর্ট মামলাটির শুনানি অন্তে বিগত ২০০৫ সালের ২৪মে মধুমিতা পার্কের অভ্যন্তরে অবৈধ নির্মাণ কাজ বন্ধ করার আদেশ দেন। দীর্ঘদিনেও সরকারি কর্মকর্তা এবং অবৈধ দখলদাররা মহামান্য হাইকোর্টের আদেশের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গলি দেখিয়ে অবৈধ স্থাপনা রেখে কেউ কেউ নিজে দোকান দিয়ে ব্যবসা করেছেন আবার কেউ কেউ অগ্রিম মোটা টাকা ভাড়া নিয়ে ভাড়া দিয়ে তাদের অবৈধ স্থাপনা সহ দখল বজায় রেখেছেন। 

যা মহামান্য হাইকোর্টের আদেশের অবমাননা ও গুরুতর অপরাধ। উক্ত বিষয় উল্লেখ করে মধুমিতা পার্ক সংরক্ষণ কমিটি মহামান্য হাইকোর্ট কোর্ট অব কন্টেম পিটিশন দাখিল করেন। যার নং ১০২/২২। উক্ত পিটিশন কয়েক দফায় শুনানি অন্তে সর্বশেষ গত ১৩ মার্চ'২৩ মহামান্য হাইকোর্ট মামলার বিবাদিদের কে আগামী ২০দিনের মধ্যে মধুমিতা পার্কের সকল অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করে মধুমিতা পার্কটিকে পূর্বের অবস্থায় ফিরিয়ে দিতে নির্দেশ দিয়েছেন। এ খবর এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে পৌরবাসির মাঝে উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে। 

অপরদিকে, শঙ্কাবোধ করছে পূর্বের ন্যায় অদৃশ্য শক্তি বাঁধা হয়ে দাঁড়াবে না তো! ঘটনার বিষয়ে মধুমিতা পার্ক সংরক্ষণ কমিটির প্রধান উপদেষ্টা জ্যৈষ্ঠ আইনজীবী জিএ সবুর এর সাথে আলাপচারিতায় জানান, উল্লেখিত ঘটনাটি সত্য এবং অতি দ্রুত মহামান্য হাইকোর্টের আদেশ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বাস্তবায়ন করবেন বলে তারা আশাবাদ ব্যক্ত করেন। এ বিষয়ে মামলার বাদী এড. প্রশান্ত কুমার মন্ডল জানান, গত ১৩ মার্চ মামলার শুনানি হয়েছে। লিখিত আকারে রায় না পাওয়া পর্যন্ত এর বেশী মন্তব্য করতে রাজি হননি তিনি। উপজেলা নির্বাহী অফিসার মমতাজ বেগম জানান, মহামান্য হাইকোর্টের আদেশ পাওয়া মাত্রই কার্যকরি ব্যবস্থা নেয়া হবে।


শেয়ার করুন

Author:

Etiam at libero iaculis, mollis justo non, blandit augue. Vestibulum sit amet sodales est, a lacinia ex. Suspendisse vel enim sagittis, volutpat sem eget, condimentum sem.

0 coment rios: