Tuesday, 2 November 2021

কয়রায় ঝুপড়ি বেঁধে দুর্বিষহ জীবনযাপন; ঘরে ফেরার আর কত দেরি-suprovatpaikgachha.com

কয়রায় ঝুপড়ি বেঁধে দুর্বিষহ জীবনযাপন; ঘরে ফেরার আর কত দেরি
 কয়রায় ঝুপড়ি বেঁধে দুর্বিষহ জীবনযাপন; ঘরে ফেরার আর কত দেরি



ইট বসানো রাস্তায় সবুজের ফাঁকে চিকচিক করে সূর্যের আলো। সে আলো এসে পড়ে অস্থায়ী ঘরের চালে। কিন্তু সব ঘরে তো আর টিনের চাল নেই। তালপাতা আর কাগজ জোড়াতালি দিয়ে বানানো ঘরের চাল আর বেড়ার ফাঁক দিয়ে ঘরে এসে উঁকি দেয় সে আলো। গাদাগাদি করে থাকা ঘরের বাসিন্দারা বের হন বাইরে। দরজার সামনে দাঁড়িয়ে চেয়ে থাকেন অচেনা দিগন্তের দিকে। দূরে তখন পানি, তাঁদের ভিটেমাটি ভাসিয়ে নিয়ে যাওয়া পানি। চোখের পানি শুকালেও সে পানি আর শুকায় না। ফেরা হয় না আপন আলয়ে।

পাঁচ মাস ধরে এমনই চিত্র দেখা যাচ্ছে খুলনার কয়রা উপজেলার হরিহারপুর গ্রামের রাস্তা ও গাতিরঘেরীর বেড়িবাঁধে। ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের আঘাতে বেড়িবাঁধের ভাঙনে সর্বস্ব হারানো উত্তর বেদকাশি ইউনিয়নের গাতিরঘেরীর মানুষেরা এখনো ঘরে ফিরতে পারেননি। ঝুপড়ি বেঁধে এখানেই দুর্বিষহ জীবনযাপন করছেন। গত শুক্রবার প্রাথমিকভাবে জোয়ারের পানি আটকানো গেলেও সম্পূর্ণভাবে পানি নিষ্কাশন করা যায়নি। ফলে নিজেদের জায়গায় ঘর বাঁধার জন্য অপেক্ষা করতে হবে আরও কিছুদিন।

গত ২৬ মে ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে প্রবল জোয়ারে কপোতাক্ষ ও শাকবাড়িয়া নদীর বেড়িবাঁধ ভেঙে তলিয়ে যায় উপজেলার ৪টি ইউনিয়নের ৪০টি গ্রাম। বিধ্বস্ত হয় ১ হাজার ২৫০টি ঘর। ভেঙে যায় বেড়িবাঁধের ১২টি পয়েন্ট। স্বেচ্ছাশ্রমে ১০টি পয়েন্ট ঠিক করা সম্ভব হলেও উত্তর বেদকাশি ইউনিয়নের গাতিরঘেরী ও মহারাজপুর ইউনিয়নের দক্ষিণ দশহালিয়ার দুইটি পয়েন্ট ঠিক করা যায়নি। এ দুই জায়গায় বাঁধ না হওয়ায় প্রায় ১৩০টি পরিবার বেড়িবাঁধে অনিশ্চয়তার মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন।

গত শনিবার সরেজমিনে দেখা যায়, ঘরবাড়ির ধ্বংসাবশেষ পড়ে রয়েছে। বসতবাড়ি হারিয়ে পাউবোর বাঁধ ও হরিয়ারপুরে ইটের রাস্তার ওপর পলিথিন ত্রিপলে মোড়ানো অস্থায়ী ঝুপড়ি ঘর বেঁধে পরিবার নিয়ে পাঁচ মাস ধরে বাস করছেন অনেকেই। এসব ঝুপড়ি ঘরে পরিবারের সব সদস্য মিলে কষ্টে রাত কাটাতে হয়। পুরুষ সদস্যরা দিনের বেলা কাজে চলে গেলে একটু স্বস্তি পায় অন্যরা। তবে নেই খাওয়ার পানি, স্যানিটেশন ও গোসলের ব্যবস্থা। নিরাপত্তা ও চিকিৎসা তো দুরাশা।

গাতিরঘেরীর গণেশ গাইন বলেন, ‘ঘরবাড়ি কিছু নেই। সব ইয়াসে ধ্বংস হয়ে গেছে। সবকিছু হারিয়ে পাঁচ মাস ধরে ছেলেমেয়ে নিয়ে ঝুপড়ি বেঁধে বাস করছি। পানি উন্নয়ন বোর্ড এবং ঠিকাদারের গাফিলতির কারণে বাঁধ নির্মাণে দেরি হয়েছে। বেঁচে থাকার তাগিদে পানি নেমে গেলে নতুন করে আবারও ঘর তুলব।’ অলোকা রানী বলেন, ‘সবকিছু হারিয়ে ইয়াসের পরের দিন থেকে খুপরি বেঁধে ইটের রাস্তার ওপর ছেলে-মেয়ে ও শ্বশুর-শাশুড়ি নিয়ে একসঙ্গে থাকছি। কবে নাগাদ আমাদের ভিটায় ফিরতে পারব জানি না। কষ্টের মধ্য দিন যাচ্ছে। বাঁধ হওয়ায় আবারও ভিটায় ফেরার স্বপ্ন দেখছি।’

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অনিমেষ বিশ্বাস বলেন, গাতিরঘেরীতে গত শুক্রবার ক্লোজার আটকানো সম্ভব হয়েছে। এখন আর জোয়ারের পানি ঢুকছে না। সম্পূর্ণ পানি নেমে গেলে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের পুনর্বাসন কার্যক্রম শুরু করা হবে।


শেয়ার করুন

Author:

Etiam at libero iaculis, mollis justo non, blandit augue. Vestibulum sit amet sodales est, a lacinia ex. Suspendisse vel enim sagittis, volutpat sem eget, condimentum sem.

0 coment rios: