পূর্ণ চন্দ্র মন্ডল, পাইকগাছা:পাইকগাছার কপোতাক্ষের তীরে মানবতা ডুকরে ডুকরে কাঁদছে। বুদ্ধি প্রতিবন্ধী ময়না বিবি ওরফে পাগলির অসহায় জীবনযাপনের সীমা নেই। আগুন জ্বালিয়ে ও ছেঁড়া কাঁথায় অর্ধাহারে অনাহারে কাটিয়ে দিচ্ছে শীতের এই দিনরাত।
উপজেলার কপিলমুনি বাইপাস সড়কের কপোতাক্ষ নদের তীরে একটি ঝুঁপড়ি ঘরে বাস করছে পাগলি ওরফে ময়না (৫৮)। কিছুটা বুদ্ধি প্রতিবন্ধী হওয়ায় লোকে তাকে পাগলি বলেই ডাকে। ঘরটির কিছু অংশ পলিথিন ও চট দিয়ে ছাওয়া ও পুরাতন কাপড় দিয়ে দু-পাশ ঘেরা। এর মধ্যে সেই অসহায় নারীর বসবাস। সম্পদ বলতে ছোট্ট একটা ভাঙ্গাচুরা অসমতল চৌকিখাট। যার দুটি পায়া না থাকায় ইট দিয়ে ঠেকা দেয়া হয়েছে। জানা যায়, কিশোরী বয়সে আগড়ঘাটার কার্ত্তিকের মোড়ের পাশে করিম গাজীর সাথে বিয়ে হয় পাগলীর। বিয়ের কয়েক বছর পর সেখানে একটি মেয়ে সন্তান হলেও মেয়ের ৭ বছর বয়সে হয় স্বামী পরিত্যাক্তা। এর পর তাকে নিয়ে বর্তমান স্থানে শুরু করে বসবাস। বাজারের ময়লা আবর্জনা পরিস্কার ও চায়ের দোকানে পানি দিয়ে যা আয় হতো তাই দিয়েই চলতো সংসার। মুল পেশা ভিক্ষাবৃত্তি। কিন্তু ১৬ বছর বয়সে মেয়েটি রোগগ্রস্ত হলে চিকিৎসা অভাবে মারা যায়। পাগলী আরও অসহায় হয়ে পড়ে। এরপর মরার পর খড়ার ঘা। নতুন স্থাপনা তৈরি হবে বলে পাগলীকে সেখান থেকে তাড়িয়ে দেয়া হয়। অগত্য আশ্রায় নেয় কপিলমুনির আশ্রয়ণ প্রকল্পের একটি ঘরের পিছনে কপোতাক্ষ নদের তীরে ভেজা স্যাঁতসেতে জায়গায়। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় সরজমিনে গেলে দেখা যায় পাগলী আগুন জ্বালিয়ে শীত নিবারণ করছে। কাঁদতে কাঁদতে কাপড় দিয়ে বার বার চোখ মুছছিলো। পাগলী জানায়, নদীর ধারে শীতের তীব্রতায় রাতে ঘুমাতে পারি না। অনেকের কাছে একটি কম্বল চেয়েছি কিন্তু ভাগ্যে জোটেনি। পাইনি কোন সরকারী ত্রাণ-সহায়তা। মাথা গোঁজার জন্য আশ্রায়। স্থানীয় হালিম হাওলাদার ও সাইদ গাজী জানান, পাগলীর মত অসহায় গৃহহীন নারী কিছুই পায় না, এটা বড় অমানবিক। স্থানীয় চেয়ারম্যান কওছার আলী জোয়ার্দ্দার জানান,এখানে এমন একজন ব্যক্তি বাস করছে তা জানা ছিল না। তবে আমার কাছে আসলে তার জন্য কিছু করার চেষ্টা করব। মানবিক দিক বিবেচনা করে অসহায় পাগলি যাতে স্বামী পরিত্যাক্তা ভাতা, ঘর সহ অন্যান্য সরকারি সুযোগ-সুবিধা পেতে পারে তার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সদয় দৃষ্টি আশা করছেন এলাকাবাসী।
0 coment rios: