Tuesday, 8 February 2022

দেশেই জরায়ু মুখের ক্যান্সারের আধুনিক চিকিৎসা

দেশেই জরায়ু মুখের ক্যান্সারের আধুনিক চিকিৎসা

ডেস্ক রিপোর্ট : বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে জরায়ু মুখের ক্যান্সার ও এর চিকিৎসা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশের নারীদের ঝুঁকির দিক দিয়ে স্তন ক্যান্সারের পরেই জরায়ু মুখের ক্যান্সারের অবস্থান। স্ক্রিনিংয়ের অভাব, বাল্যবিবাহ, যৌন সংক্রামিত রোগ এবং নিম্ন-আর্থসামাজিক অবস্থার কারণে বাংলাদেশের জন্য এই ক্যান্সার একটি বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবে এ দেশে চিকিৎসা বিজ্ঞানের অভূতপূর্ব উন্নতির ফলে জরায়ু মুখের ক্যান্সার নির্ণয় ও এর চিকিৎসায় উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি সাধন হয়েছে।ফলে দেশেই এখন জরায়ু মুখের ক্যান্সারসহ প্রায় সকল ক্যান্সারের বিশ্বমানের চিকিৎসাসেবা প্রদান সম্ভব।

জরায়ু মুখের ক্যান্সারের চিকিৎসায় রেডিওথেরাপি একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পন্থা। প্রাথমিক পর্যায়ে ধরা পড়লে অনেক ক্ষেত্রেই জরায়ু মুখের ক্যান্সারের চিকিৎসা রেডিওথেরাপির মাধ্যমে করা সম্ভব। তবে যদি ক্যান্সার ছড়িয়ে যায় সেক্ষেত্রে রেডিওথেরাপির পাশাপাশি কেমোথেরাপি যোগ করলে ভালো ফলাফল পাওয়া যায়।বর্তমানে ক্যান্সারের পর্যায় বা স্টেজ নিশ্চিত করতে ‘পেট সিটি স্ক্যান’ বা ‘এমআরআই স্ক্যান’ পদ্ধতিগুলো ব্যবহার করা হচ্ছে। নতুন এই পদ্ধতিগুলো ব্যবহারে আধুনিক রেডিওথেরাপির মাধ্যমে আরো নিখুঁতভাবে চিকিৎসা করা সম্ভব। রেডিওথেরাপি পরিকল্পনায় পেট সিটি স্ক্যানের ভূমিকা জরায়ু মুখের ক্যান্সার যদি জরায়ুর আশেপাশের লিম্ফ নোডে ছড়িয়ে পড়ে তাহলে তা ঝুঁকিপূর্ণ বা বিপজ্জনক পর্যায় হিসেবে বিবেচিত হয়।

এই সমস্ত রোগীদের ক্ষেত্রে সঠিকভাবে ওই লিম্ফ নোডগুলোকে চিকিৎসা দিতে না পারলে রোগ পুনরায় ফিরে আসার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। সিটি স্ক্যান বা এমআরআইয়ের তুলনায় পেট সিটি স্ক্যান এই ধরনের লিম্ফ নোড খুঁজে বের করতে বেশ কার্যকরী। সেক্ষেত্রে চিকিৎসা শুরুর পূর্বে পেট সিটি স্ক্যান করতে পারলে ক্যান্সারের পর্যায় সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা পাওয়া সম্ভব এবং রেডিয়েশন অঙ্কলজিস্ট ওই রোগীর চিকিৎসার ব্যাপারে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে সক্ষম হন। লিম্ফ নোডে মেটাস্ট্যাসিস থাকলে সেই জায়গাসহ এর নিকটবর্তী লিম্ফ নোড স্টেশনকে সঙ্গে নেওয়া থেকে শুরু করে এসআইবি টেকনিকের মাধ্যমে লিম্ফ নোডকে আরো বেশি ডোজ বুস্ট করা সম্ভব।

আর এর পেছনে প্রধান ভূমিকা রাখছে আইএমআরটি-এর মতো আধুনিক রেডিয়েশন থেরাপি। এ ছাড়াও অনেক সময় পেট সিটি স্ক্যানের মাধ্যমে জরায়ু মুখের ক্যান্সার শরীরের অন্যান্য দূরবর্তী স্থানে ছড়িয়ে পড়লে তা নির্ণয় করা যায়। তবে সেক্ষেত্রে চিকিৎসা পরিকল্পনা অনেকাংশেই পরিবর্তন হয়। রেডিওথেরাপি পরিকল্পনায় এমআরআই-এর ভূমিকা ক্লিনিক্যাল তথ্যের মাধ্যমে সার্ভিক্যাল ক্যান্সারের স্টেজিং ও রেডিওথেরাপি পরিকল্পনা করা হয়।

টিউমারের স্থানীয় সম্প্রসারণ বিশেষ করে এর আকার, প্যারামেট্রিয়াম জড়িত কি না, পেলভিক সাইড ওয়ালের অবস্থা ইত্যাদি শুধু ক্লিনিক্যাল পরীক্ষার মাধ্যমে নির্ধারণ করা অনেক সময় কঠিন হয়ে পড়ে। সেক্ষেত্রে এমআরআই  অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি পদ্ধতি। এমআরআই-এর মাধ্যমে টিউমার কতটুকু বিস্তৃতি লাভ করেছে ও চিকিৎসায় কতটুকু সুফল মিলছে সে সম্পর্কেও ভালো ধারণা পাওয়া যায়। পেলভিক রেডিয়েশনের পরে সিটি স্ক্যান ও অ্যানেস্থেশিয়ার অধীনে ক্লিনিকাল পরীক্ষা, উভয়ের তুলনায় এম.আর.আই-এর মাধ্যমে অবশিষ্ট টিউমারের ব্যাপারে স্বচ্ছ ধারণা পাওয়া সম্ভব।

এছাড়া প্রচলিত ব্র্যাকিথেরাপি’র তুলনায় এম.আর.আই-ভিত্তিক ব্র্যাকিথেরাপি’র মাধ্যমে টিউমারে উচ্চমাত্রার রেডিয়েশন প্রদান সম্ভব। পাশাপাশি মলদ্বার ও মূত্রাশয়-এর মতো রেডিওসেনসিটিভ অঙ্গকে তুলনামূলক বেশি সুরক্ষিত রাখা সম্ভব। অনেক রোগীকে ইনটেনসিটি-মডুলেটেড রেডিয়েশন থেরাপি (আই.এম.আর.টি) নামক পদ্ধতিতে চিকিৎসা করা হয়ে থাকে।

আইএমআরটি হলো এক প্রকার ‘থ্রি ডাইমেনসনাল’ রেডিয়েশন, যা নিরাপদে ও ব্যথাহীনভাবে একটি টিউমারে সুনির্দিষ্ট রেডিয়েশন ডোজ সরবরাহ করে। কিন্তু এই পন্থা অবলম্বনে আশেপাশের স্বাভাবিক টিস্যুতে ডোজ অনেক কমে যায়। এর জন্য সাধারণত চার থেকে ছয় সপ্তাহ চিকিৎসা প্রয়োজন হয়। তবে যারা এসব সেবা-সুবিধা পাওয়া না পাওয়া নিয়ে শঙ্কিত, তারা জেনে খুশি হবেন যে পেট সিটি স্ক্যান, এম.আর.আই থেকে শুরু করে থ্রি-ডি, সিআরটি, আই.এম.আর.টি-এর মতো উন্নত রেডিওথেরাপিগুলো এখন দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে পাওয়া যাচ্ছে। এদের মধ্যে নির্ভরযোগ্য ও সেরা হিসেবে দেশের সর্বপ্রথম জেসিআই স্বীকৃত্ব হাসপাতাল, এভারকেয়ার হসপিটাল ঢাকা অন্যতম।



শেয়ার করুন

Author:

Etiam at libero iaculis, mollis justo non, blandit augue. Vestibulum sit amet sodales est, a lacinia ex. Suspendisse vel enim sagittis, volutpat sem eget, condimentum sem.

0 coment rios: