সুন্দরবন সংলগ্ন এলাকায় লোনা পানির ঘের বন্ধ করে শুরু হলো মিষ্টি পানিতে ধান চাষ
রাসেল আহাম্মেদ, কয়রা থেকেঃআশির দশক থেকে সুন্দরবন সংলগ্ন অর্থাৎ খুলনার কয়রা উপজেলা এলাকায় অধিকাংশ মানুষের জীবিকা নির্বাহের মাধ্যম স্বরুপ হয়ে আসছে লবন পানির মৎস ঘের তবে ‘আর নয় লবণ পানির চিংড়ি চাষ, এবার হবে মিষ্টি পানিতে ধান চাষ’ এই শ্লোগানের মধ্যে দিয়ে ভয়াবহ লবণ পানির অভিশাপ থেকে মুক্ত হতে চলেছে উপজেলার নদী ও সুন্দরবনের পার্শ্ববর্তী মহেশ্বরীপুর ইউনিয়নের `নয়ানী' গ্রাম(২নং ওয়ার্ড)। স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ও ইউপি সদস্যের সার্বিক প্রচেষ্টায় প্রায় ২ হাজার বিঘা জমিতে নদী থেকে লবণ পানি উত্তোলন বন্ধ করা হয়েছে এবং ঐ জমিতে জমির মালিকরা চলতি বছরে বোরো মৌসুমে বোরো আবাদ শুরু করেছেন।
সরোজিমনে ঘুরে জানা গেছে, পরিবেশ বিপর্যয় এই এলাকার মানুষের যেন চিরন্তন দৈণ্যদশা, অর্জিত অর্থের প্রাপ্তিতে অসম চিংড়ি চাষের বর্তমান পদ্ধতিকে বলা যায় বিতর্কিত করে তুলেছে। যার ফলে চিংড়ি খাতটি রফতানি বাণিজ্যের অন্যতম বৃহৎ অর্থকারী খাত হিসাবে প্রতিষ্ঠিত হলেও সঠিক নীতিমালা এবং প্রয়োজনীয় পৃষ্ঠপোষকতা ও আনুকূল্যের অভাবে দেশের জীবনদানকারী খাত হিসাবে প্রতিষ্ঠিত হতে সক্ষম হচ্ছে না বরং প্রান্তিক চাষিদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। যার কারণে জমির মালিক ও কৃষকরা দাবি তোলেন লবণ পানির চিংড়ি ঘেরের বিরুদ্ধে। তারা এখন মিষ্টি পানিতে চাষাবাদ করতে চান।
কয়রা উপজেলার মৎস্য অফিস সূত্রে জানা যায়, উপজেলার সাতটি ইউনিয়নে সর্বোমোট ৬ হাজার ২৭০ হেক্টর জমিতে চিংড়ি চাষ করা হয়। এর মধ্যে ছোট-বড় ঘেরের সংখ্যা রয়েছে ৭ হাজারের অধিক। তবে কিছু কিছু এলাকায় বসতবাড়ি ছাড়া যে দিকে চোখ যায় দেখা যায় শুধু লবণ পানির চিংড়ি ঘের আর ঘের। তবে ঘেরের বিরুদ্ধে নয় লবণ পানির বিরুদ্ধে ২০২১ সালের ২৩ ডিসেম্বর উপজেলা পরিষদের সাধারণ সভায় লবণ পানির চিংড়ি চাষ না করার জন্য উপস্থাপন করা হয় এরপর থেকে ঘোর চাষিরাই নড়েচড়ে বসেন লবণ পানির চিংড়ি চাষের বিরুদ্ধে।
ঘেরে লবণ পানি না ওঠানোর জন্য মাইকিং করে সহ বিভিন্ন ভাবে জানিয়ে দেওয়া হয় এবং একই সাথে অবৈধ পাইপ লাইন অপসারণের জন্য ১৫ দিনের সময় বেঁধে দেওয়া হয়। এই সময়সীমার মধ্যে যারা অপসারণ করেনি তাদের পাইপ ও লাইনটি অপসারণ করা হয়। ঐ সময় অনেক ঘের মালিকরা ঘের না করার ঘোষণা দিয়েছিলেন তাই তারই ধারাবাহকতায় দীর্ঘ এক বছর পরে উপজেলার মহেশ্বরীপুর ইউনিয়ানের নয়ানী গ্রাম(২নং ওয়ার্ড) লবণ পানিমুক্ত হয়েছে। বর্তমানে সেখানে বোরো আবাদ ও শুরু হয়েছে।
এ বিষয়ে স্থানীয় ৩নং মহারাজপুর ইউপি চেয়ারম্যান প্রভাষক মোঃ শাহনেওয়াজ শিকারী বলেন, মুলুত জমির মালিক ও এলাকাবাসীর সাথে আলোচনা করেই লবণ পানি উত্তোলন বন্ধ করা হয়েছে। আশির দশক থেকে এলাকায় অপরিকল্পিতভাবে চিংড়ি চাষ শুরু হয়, যার কারণে জমির মালিকদের জমি থাকলেও চাল কিনে খেতে হচ্ছে। তবে এখন থেকে ধান ও মাছ দুটোই পাওয়া যাবে বলে আশাব্যক্ত করেন।
স্থানীয় নয়ানী গ্রাম(২নং ওয়ার্ড) এর সদস্য মনি রায় বলেন, ২০২২ সাল অর্থাৎ বিগত বছর ঘের না করার সিদ্ধান্ত হলে জমির মালিক ও এলাকাবাসীরা এক বছর সময় নেন এবং আগামী বছর ঘের করবেন না বলে অঙ্গীকারবন্ধ হন। সেই ধারাবাহিকতায় এ বছর এই গ্রাম লবণ পানি মুক্ত হয়েছে।
উল্লেখ্য যে, প্রায় ৮০ এর দশকের পর থেকে এবার লবণ পানি হতে মুক্ত হয়ে বোরো আবাদ শুরু করতে পেরে খুুশির আমেজ এলাকাবাসীদের মধ্যে । তবে এরই ধারাবাহিকতায় একে একে লবণ পানি বন্ধের কার্যকর বাস্তবায়ন দেখতে চায় ইউনিয়নবাসীরা।
0 coment rios: