এমপিও ভুক্ত হয়নি সরদার আবু হোসেন কলেজ; শিক্ষক-কর্মচারীদের মানবেতর জীবন-যাপন |
উপকূলীয় চর অঞ্চল হিসেবে পরিচিত খুলনার পাইকগাছা উপজেলার সোলাদানা ইউনিয়ন। ইউনিয়নটি অনেকটাই নদী ও খালদ্বারা বিস্তৃত। সুন্দরবন সংলগ্ন শিবসা নদীর ধারেই সোলাদানা ইউনিয়নের মূল অবস্থান। উপজেলার ১০টি ইউনিয়নের মধ্যে অত্র ইউনিয়নটি সবচেয়ে অবহেলিত। এ ইউনিয়নে অর্ধলাখেরও বেশি মানুষের বসবাস।
ঘূর্ণিঝড় সিডর, আইলা, ফনী, বুলবুল ও আম্পান সহ বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলা করেই এখানকার মানুষের বসবাস করতে হয়। ইউনিয়নের যোগাযোগ ব্যবস্থা যেমন অনূন্নত তেমনি এখানকার বেশিরভাগ মানুষ দারিদ্রসীমার নীচে বসবাস করে। বাঁশের সাকো পার হয়েই এখানকার ছেলে-মেয়েরা স্কুল-কলেজে যায়। ইউনিয়নের শিক্ষা ব্যবস্থাও খুব বেশি উন্নত নয়। এখানে রয়েছে ৪টি মাধ্যমিক, ২টি বালিকা বিদ্যালয়, ১টি মাদ্রাসা ও ১টি কলেজ।
এখান থেকে দুই দশক আগেও অত্র ইউনিয়নের ছেলে-মেয়েদের উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা লাভের কোন সুযোগ ছিল না। দীর্ঘপথ পাড়ি দিয়ে যেতে হতো উপজেলা সদর সহ বিভিন্ন স্থানে। এলাকার ছেলে-মেয়েরা যাতে উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষার সুযোগ পায় সে লক্ষেই ২০০৩ সালে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, সমাজসেবক, শিক্ষানুরাগী ও দানশীল ব্যক্তিদের সমন্বয়ে অত্র ইউনিয়নের মাঝামাঝি সোলাদানা-বেতবুনিয়া প্রধান সড়কের পাশে ১৭ বিঘা জমির উপর একটি উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান করা হয়।
ইউনিয়নের সাবেক প্রেসিডেন্ট সরদার আবু হোসেন এর নামে কলেজটির নামকরণ করা হয়। প্রতিষ্ঠানটি ২০০৩ সালে পাঠদান অনুমতি ও ২০০৯ সালে সরকারের সকল শর্ত পূরণ করে একাডেমিক স্বীকৃতি লাভ করে। প্রতিষ্ঠানটি প্রতিষ্ঠার পর হতে অধ্যবধি উপক‚লীয় চর অ ল হিসেবে পরিচিত সোলাদানা ইউনিয়ন সহ আশ-পাশের ছেলে-মেয়েদের উচ্চ শিক্ষা প্রদানে গুরুত্বপূর্ণ ভ‚মিকা রেখে আসছে।
প্রতিষ্ঠানে ছাত্র-ছাত্রীদের ভর্তি ও পাশের হার যথেষ্ঠ সন্তোষ জনক। লেখাপড়ার মানও ভাল। প্রতিষ্ঠানটি প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ারপর সরকারিভাবে নতুন একটি দৃষ্টিনন্দন একাডেমিক ভবন নির্মাণ করে দেওয়া হয়েছে। নতুন ভবনে প্রতিষ্ঠানের উন্নয়ন হলেও প্রতিষ্ঠানে কর্মরত শিক্ষক কর্মচারীদের ভাগ্যের কোন পরিবর্তন হয়নি। বিগত দুই দশক উচ্চ মাধ্যমিক এ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি এমপিও ভুক্তি হয়নি। ফলে অত্র প্রতিষ্ঠানে কর্মরত শিক্ষক কর্মচারীরা বিগত ১৯ বছর ধরে মানবেতর জীবন-যাপন করছে।
বর্তমানে প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ২২৮জন, শিক্ষক-কর্মচারী রয়েছে ২০জন। কর্মরত শিক্ষক কর্মচারীরা না পায় কোন বেতন ভাতা, না পায় সরকারি কোন সুবিধা। অনেকেই শিক্ষাকতার পাশাপাশি বিকল্প ছোট খাটো কাজ করে পরিবার পরিজন নিয়ে কোন রকমে জীবন-যাপন করছে। প্রতিষ্ঠানে কর্মরত শিক্ষক-কর্মচারী সহ এলাকাবাসীর একটাই কথা আর কতবছর অপেক্ষা করলে প্রতিষ্ঠানটি এমপিও ভুক্তি হবে! এমপিও ভুক্তির বিষয়টি এখন অত্র এলাকার মানুষের প্রাণের দাবী।
প্রতিষ্ঠানে কর্মরত প্রভাষক বজলুর রহমান বলেন, প্রতিষ্ঠানটি এমপিও ভুক্ত না হওয়ায় পরিবার পরিজন নিয়ে দীর্ঘদিন মানবেতর জীবন-যাপন করছি। চাকুরির আগে জানতাম শিক্ষকতা একটি মহান পেশা। কিন্তু মহান এ পেশায় কর্মরত থেকে মানবেতর জীবন-যাপন করতে হবে এটা জানা ছিলনা। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সহ সংশ্লিষ্ট সকলের কাছে আমাদের প্রাণের দাবী কলেজটি এমপিও ভুক্ত করা হোক।
ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল মান্নান গাজী বলেন, চর অ ল হিসেবে পরিচিত অত্র ইউনিয়নের উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বিস্তারে সরদার আবু হোসেন কলেজ গুরুত্বপূর্ণ ভ‚মিকা রাখছে। প্রতিষ্ঠানটি এমপিও ভুক্ত করা জরুরী হয়ে পড়েছে।
প্রতিষ্ঠানের সভাপতি ও উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান শিয়াবুদ্দীন ফিরোজ বলেন, ১৭ বিঘা জমির উপর কলেজটি অত্র ইউনিয়নের ঐতিহ্য। প্রতিষ্ঠানে খেলার মাঠ, লাইব্রেরী, একাডেমিক ভবন, প্রশাসনিক ভবন ও শহীদ মিনার সহ লেখাপড়ার জন্য উন্নত পরিবেশ রয়েছে। কিন্তু দুঃখ জনক দীর্ঘদিনেও অত্র প্রতিষ্ঠানটি এমপিও ভুক্ত হয়নি।
উপজেলার অন্যান্য কলেজ থেকে অত্র প্রতিষ্ঠানের দূরত্বও অনেক। এখানকার লেখাপড়ার মান অনেক প্রতিষ্ঠানের চেয়ে অনেক ভালো। এখানে কর্মরত সবাই দুর্বিসহ জীবন যাপন করছে। প্রতিষ্ঠান ও এলাকার স্বার্থে কলেজটি এমপিও ভুক্ত করা জরুরী। এ ব্যাপারে আমরা প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে স্থানীয় সংসদ সদস্য মহোদয়কে অবহিত করেছি। এমপি মহোদয় বিষয়টি আন্তরিকতার সহিত নিয়েছেন।
সংসদ সদস্য আলহাজ্ব আক্তারুজ্জামান বাবু বলেন, বর্তমান সরকার শিক্ষা বান্ধব সরকার। শেখ হাসিনা সরকারের সময়ে দেশের কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান অবহেলিত থাকবে না। সরকার শিক্ষার মান উন্নয়নের লক্ষে প্রতিটি প্রতিষ্ঠান উন্নয়ন করছে। আশা করছি নির্বাচনী এলাকার সরদার আবু হোসেন কলেজটিও বর্তমান সরকারের সময়ে এমপিও ভুক্তি হবে। সংসদ সদস্য হিসেবে এ ব্যাপারে সর্বাত্বক চেষ্টা করা হবে বলে এমপি বাবু জানিয়েছেন।
0 coment rios: