Wednesday, 26 January 2022

দরিদ্র জেলে নারায়ণ-অমেলারা ভিটেমাটি আকড়ে থাকতে চান

দরিদ্র জেলে নারায়ণ-অমেলারা ভিটেমাটি আকড়ে থাকতে চান

পূর্ণ চন্দ্র মন্ডল::  আসমানীরে দেখতে যদি তোমরা সবে চাও, রহিমদ্দির ছোট্ট বাড়ি রসুলপুরে যাও। বাড়ি তো নয় পাখির বাসা ভেন্না পাতার ছানি, একটুখানি বৃষ্টি হলেই গডড়য়ে পড়ে পানি। একটুখানি হাওয়া দিলেই ঘর নড়বড় করে, তারি তলে আসমানীরা থাকে বছর ভরে-----। 

গ্রাম-বাংলার অয়াজপাড়া গায়ে এখনও অনেক আসমানীরা শত কষ্টে নিভৃতে বসবাস করছে। তাদের মধ্যে একজন অমেলা বিশ্বাস। বয়স ৬২ বছর হবে। তাঁর বৃদ্ধ স্বামী  নারায়ণ বিশ্বাস। বয়স ৭০ ছুই ছুই। পাইকগাছা সদর থেকে ১৪/১৫ কিলোমিটার দূরে মামুদকাটি গ্রামটি। পাশদিয়ে বহে চলেছে কপোতাক্ষ নদ। কোল ঘেঁষে এ পল্লীতে শতাধিক জেলে পরিবারের বসবাস। প্রায় ৫শ বছর ধরে বংশ পরশপরাই এ পেশায় জীবিকা নির্বাহ করে আসছে৷ ঝড়ঝঞ্চট, জলোচ্ছ্বাস সহ নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলা করে নদের পাড় আঁকড়ে বাস করছে এ পরিবার গুলো। শুধু ভিটার সামান্য জায়গা ছাড়া কোন আবাদি জমি নেই এখানকার জেলেদের। এ গ্রামের বৃদ্ধ-বৃদ্ধার নারায়ণ পরিবারের মাত্র ১০ শতকের ভিটা জমি। বয়সের ভারে ন্যুজ নারায়ণ বিশ্বাস এখন নদী বা সমুদ্রে মাছ ধরতে পারে না তাই নিকটবর্তী মৎস্য ঘের থেকে দু-এক কেজি মাছ কিনে এনে গ্রামের হাটে বিক্রি করে। আর বৃদ্ধা স্ত্রী অমেলা তাদের জীর্ণ কুঠিরের বারান্দায় বসে জাল বুনেন। এ থেকে যা আয় হয় তা দিয়েই কষ্টে দিন কাটে। মাঝে মধ্যে পেটে দানা পানি না পড়লেও খেদ নেই তাদের। তাদের দুঃখ নিজেদের কুঁড়ে ঘরে বসবাস করতে পারছেন না। রাতে একটু স্বস্থিতে ঘুমাতেও পারছেন না তারা। 

দরিদ্র জেলে নারায়ণ-অমেলারা ভিটেমাটি আকড়ে থাকতে চান

অমেলা বিশ্বাস জানান, অসহায়ত্বের সুযোগে পাশের প্রভাবশালী অনিল বিশ্বাসের চোখ পড়েছে আমাদের ভিটার উপর। লোভের বশবর্তী হয়ে শেষ সম্বলটুকুর সিংহভাগ জমি জবর দখল করে রাতারাতি ঘর বানিয়েছেন। বাকি এক চিলতে জায়গায় ভাঙ্গা ছোট্ট ওই কুঁড়ে ঘরের বারান্দার এক কোণে অতি কষ্টে নাওয়া খাওয়াসহ রাত যাপন করতে হয়। সেটাও গ্রাস করার জন্য উঠে পড়ে লেগেছে অনিল বিশ্বাস। নানা ভীতি প্রদর্শন করা হচ্ছে আমাদের। সরেজমিনে গেলে দেখা যায়, ঘুণে ধরা কয়েকটি বাঁশের খুঁটি আপ্রাণ চেষ্টা করছে জীর্ণশির্ণ গোলপাতার ঘরটিকে মাথা উচুঁ করে রাখতে। ভিতর দিয়ে তাকাতেই সূর্য্যিমামা কয়েকটা চালের ভিতর দিয়ে উঁকি মারছে। বাহির থেকে  বোঝা যাচ্ছে রোদ বৃষ্টি থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য তাবু দেওয়া হয়েছে। যে কোন দমকা বা ঝড়ো হাওয়ায় ঘরটি মাটিতে মিশে যেতে পারে। 

বৃদ্ধ নারায়ণ বিশ্বাস ও তার স্ত্রী অমেলা বিশ্বাস কান্না জড়িত কন্ঠে প্রতিনিধিকে বলেন, কত ঝড় ঝঞ্ঝার প্রতিকূলতা গেল, একাত্তরে রাজাকারদের তাড়া খেয়েছি তবু এ ভিটেমাটি একদিনের জন্য ছাড়েনি। ওরা ইন্ডিয়ায় গেলি ওদের ভিটে চকি দেছি৷ আজ আমাদের কে ভিটে ছাড়া করতে উটেপড়ে লেগেছে। ঘরটি ঠিকমত বানতি  দেচ্ছে না অনিল বিশ্বাস। এ নিয়ে অনেকবার তাদের হাতে আমরা শারিরীক নির্যাতনের শিকার হইছি। প্রাণভয়ে আমাদের ছেলে চলে গেছে পাটনি পাড়ায়। 

তারা আরও জানান, মোকদ্দমায় উপজেলা সিনিয়র সহকারী জজ আদালত আমাদের পক্ষে রায় দিলেও সে রায় তোয়াক্কা করছেন না অনিল বিশ্বাস। সে কারণেই এই ভাঙ্গাচুরা ঘরের স্যাঁৎসেতে  বারান্দায় একপাশে রান্না করি। অন্য পাশে ইটের উপরে কয়েকটি তকতা দিয়ে তাদের থাকতে হয় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে। অসহায় অমেলাদের একটাই দাবি, খাদ্য চাই না, বস্ত্র চাই না দখলে করে নেয়া তাদের শেষ সম্বল এই পৈত্রিক ভিটের জায়গাটি ফিরে পেতে চাই। ঘরটি সংস্কার করে যেনো শেষ বয়সে মাথা গুঁজতে পারি। এ বিষয় অনিল কৃষ্ণ জানান, এটি আমাদের জমি। কোর্টে মামলা চলছে যে রায় পাবে সেই জমিতে থাকবে। আমি জোর করে জমি দখল করেনি। তবে ঘরবাঁধার ব্যাপারে বাঁধা দিয়েছি। স্থানীয় ইউপি সদস্য শংকর বিশ্বাস জানান, আমি অনেকবার মিমাংসার চেষ্টা করেছি কিন্তু তারা আমার কথা শুনচ্ছে না।


শেয়ার করুন

Author:

Etiam at libero iaculis, mollis justo non, blandit augue. Vestibulum sit amet sodales est, a lacinia ex. Suspendisse vel enim sagittis, volutpat sem eget, condimentum sem.

0 coment rios: