ফলে কি ঘটছে? শত শত বিঘা চিংড়ি ঘের তলিয়ে যায়, লক্ষ লক্ষ টাকার আর্থিক ক্ষতি, ফসলের ক্ষেত ও আমনের বীজতলা নষ্ট হয়। গ্রামের পর গ্রাম জলাবদ্ধ। খওয়ার পানি সংকট, রাস্তা-ঘাট চলাচলের অনুপযোগী। ছেলে-মেয়েরা স্কুলের যেতে পারে না। নদীপারের মানুষগুলো নির্ঘুম রাত কাটানো, প্রবল স্রোতে নদীগর্ভে ঘর-বাড়ী, গাছ-গাছালী বিলীন ইত্যাদী ইত্যাদী। সংবাদ পেয়ে জনপ্রতিনিগণ, পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাদের ছুটাছুটি। আশ্বাস প্রদান।
দু'এক বস্তা বালির ব্যাগ ফেলা, আপনারা সাংবাদিক বৃন্দরা ফোলাও করে সেগুলো ফটোশেসন ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশ করা। এগুলোই তো আমরা প্রতিবছর দেখে আসছি। কথা গুলো দৈনিক জন্মভূমির এ প্রতিবেদককে অনেকটাই ক্ষোভের সাথে বলছিল স্থানীয় ক্ষতিগ্রস্থ নদীপাড়ের এলাকাবাসী। আপনারা প্রতিবার এসে আমাদের ছবি তোলেন, নিউজ করেন আমাগে কি লাভ হয়। আপনারা এমন নিউজ করতে পারেন না, যেডা শেখের বেটি, শেখ হাসিনা জানতে পারে। আমরা তাঁঁর কাছে আমাদের দুক্ক দুদশার কতা বলতে পারি।
এ দুর্দশা থেকে স্থায়ীভাবে সমাধানে টেঁকসই বেঁড়িবাঁধের জন্য উপকূলবর্তী এলাকাবাসী সরাসরি প্রধানমন্ত্রীর আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। গত দু'দিন বিভিন্ন এলাকা ঘুরে ও বিভিন্ন মাধ্যমে সংবাদ সংগ্রহকালে এসকল তথ্যগুলো উঠে এসেছে।স্বাধীনতা পরবর্তীতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু'র শুভ উদ্বোধনের মাধ্যমে যে বেঁড়িবাঁধ নির্মাণ হয়েছিল ৭৫ এর ১৫ আগস্টের পর কেউ বড় ধরণের সংস্কার করেনি। সেই থেকে নড়বড়ে বেঁড়িবাঁধ আজ জীর্ণশীর্ণ।
গতকয়েক ধরে বৃষ্টি ও পূর্ণিমার গণ ওসৃষ্ট লঘুচাপে অস্বাভাবিক জোয়ারেনদীগুলো পানিতে বৃদ্ধিতে পাইকগাছার সোলাদানা, দেলুটি, রাড়ুলী, হরিঢালী, লস্কর সহ বিভিন্ন এলাকায় বেঁড়িবাঁধ ভাঙ্গণ, উপচে পানি প্রবেশ, খরস্রোতে ব্যাপক বাড়ি-ঘর, ফসলের ক্ষেত ভেঙ্গে নদীগর্ভে যাওয়ার মত ঘটনা ঘটে চলেছে।দেলুটি ইউপি চেয়ারম্যান রিপন কুমার মন্ডল জানান, জলবায়ু পরিবর্তন জনিত যে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা তাঁরমধ্যে উপজেলার ৪টি দ্বীপবেষ্টিত দেলুটি অধিক ঝুঁকিপূর্ণ। নদীর পানি বৃদ্ধিতে দেলুটির ২১ ও ২২নং পোল্ডার এর দারুনমল্লিক ও কালিনগরের ওয়াপদার বেঁড়িবাঁধ মারাত্মক ঝুঁকিতে রয়েছে। কয়েক জায়গায় বেঁড়িবাঁধ উপচে ভিতরে পানি প্রবেশ করেছে।
এলাকার মানুষ শঙ্কিত। তবে বর্তমান সরকার দেলুটিবাসীর জন্য বেঁড়িবাঁধ সংস্কার করা সহ অন্যান্য উন্নয়নের ধারা গ্রহণ করছেন তাহাতে এলাকাবাসী চিরকৃতজ্ঞ। এদিকে কপোতাক্ষের জোয়ারের পানিতে প্লাবিত মাহমুদ কাটির জেলেপল্লী। কপোতাক্ষ নদীর তীরবর্তী এ গ্রামটি বিগত ২/৩ বছর যাবৎ ভয়াবহ ভাঙনের মুখে পড়েছে। একপ্রকার অতংকে দিন কাটাচ্ছেন জেলে পল্লীর বসিন্দারা। প্রতি বছর অনেক পরিবার তাদের শেষ সম্বল ভিটেমাটি হারিয়েছেন। যারা এখনও আছেন তারা ভাঙনে রীতিমত শঙ্কিত। তাদের দাবী সরকারীভাবে শক্ত বাঁধ নির্মাণ করলে ভাঙন রোধ সম্ভব হতো। এ বিষয়ে ৭ নং ওয়ার্ড ইউপি সদস্য শংকর বিশ্বাস জানান, রবিবার জোয়ারের পানিতে মাহমুদ কাটির জেলে পল্লী সহ রামনাথপুর এলাকার ঘরবাড়ি ফের তলিয়ে যাওয়ার অবস্থা।
বসতবাড়ির উঠানে হাটু পানি। এ অবস্থায় উপজেলা প্রশাসনসহ এলাকার এমপি মহোদয়ের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন তিনি।বৃষ্টির পানি ও নদীর পানি বৃদ্ধিতে রাড়ুলী ইউপি চেয়ারম্যান আঃ কালাম আজাদ সহ এলাকাবাসী মারাত্মক শংকা বোধ করছেন। তিনি জানান, যেকোন মুহূর্তে ২, ৩নং গেট ছাপিয়ে সমগ্র গ্রাম ও বিল এলাকায় পানি প্রবেশ করে ক্ষতি করতে পারে। আমরা প্রস্তুত তবে সরকারের সহযোগীতা কামনা করছি। সবচেয়ে বেশি মারাত্মক রাড়ুলী পূর্ব মালোপাড়া। সেখানে প্রতিনিয়ত ভাঙ্গছে।আপনারা জানেন, ভাঙ্গণে ইতোপূর্বে প্রায় ১শ পরিবার ভিটেমাটি ছেড়েছে।
এলাকাবাসী শঙ্কিত।গড়ইখালী ইউপি চেয়ারম্যান জিএম আব্দুস সালাম কেরু জানান, গড়ইখালী ঘোরামী বাড়ি সংলগ্ন গাংরক্ষী নদী ২০-৩০ফুট ভেঙ্গে গেলে এলাকাবাসী স্বেচ্ছাশ্রমের বেঁড়িবাঁধ টি সংস্কার কাজ শেষের পথে। এখন রাত সাড়ে ৮টা এখনও কাজ করছি। এছাড়া কুমখালীর খুতখালী ও গড়ইখালী বাজার ঝুঁকিতে রয়েছে। লস্কর ইউপি চেয়ারম্যান কেএম আরিফুজ্জামান তুহিন লস্করের বাইনতলা ও খড়িয়ার মিনহাজ ঝুঁকিপূর্ণ স্লুইচগেট। সবচেয়ে বেশী ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে সোলাদানা। ২৩ নং পোল্ডার সোলাদানার ভাঙ্গাহাড়ি মাষ্টার পাড়ায় পাউবো'র বেঁড়িবাঁধ ভেঙ্গে গোটা এলাকা প্লাবিত হয়ে টেংরামারি সহ শত-শত বিঘার মৎস্য ঘের ভেসে গেছে।
রাস্তাঘাট, আমনের বীজতলা তলিযে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। শনিবার দুপুরে জলোচ্ছ্বাসে শিবসা নদীর পানির চাপে মাষ্টার পাড়া ৫ মুখ ওয়ালা পরিত্যক্ত কারিতাসর স্লুইচ গেটের স্থান থেকে ভেঙ্গে প্লোল্ডারে পানি প্রবেশ করে । বিকেলে ইউপি চেয়ারম্যান ও উপজেলা সিপিপি'র টিম, ঘের মালিক সহ স্থানীয়রা রাত ১০ টা পর্যন্ত স্বেচ্ছাশ্রম দিযে বাঁধ মেরামত করেন। কিন্তু রবিবার দুপুরের প্রবল জোয়ারে ভাঙ্গনের স্থান থেকে আরোও ২০-২৫ ফুট জায়গা জুড়ে বেঁড়িবাঁধ ভেঙ্গে গোটা এলাকা প্লাবিত হয়ে শত-শত বিঘার চিংড়ি ঘের ভেসে গেছে। তলিয়ে গেছে রাস্তাঘাট।
ক্ষতি হয়েছে চলতি আমনের বীজতলা। স্থানীয ইউপি সদস্য ও সিপিপি'র টিম লিডার আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, এলাকায় মাইকিং করে ১৫ আগস্ট সকালে ভাঙ্গনের স্থানে কাজ করার জন্য সর্বসাধারনকে ডাকা হয়েছে। এ ছাড়া জোয়ারে গদাইপুরের নদী তীরবর্তী বাইশের আবাদ গুচ্ছগ্রাম প্লাবিত হয়েছে।
পাউবো'র উদাসীনতাই বর্তমান বেঁড়িবাঁধের নাজুক অবস্থার জন্য দায়ী করেছেন সুধীসমাজ। এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মমতাজ বেগম বলেন, সোলাদানায় পাউবো'র বেঁড়িবাঁধ ভাঙনে ক্ষয়ক্ষতি সহ রাড়ুলী, মাহমুদকাঠি ও কয়েক স্থানে বেঁড়িবাঁধ ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। তিনি এ প্রতিনিধিকে বলেন, সোলাদানার বেড়িবাঁধ মেরামতের জন্য জেলা প্রশাসক ( ডিসি) মহোদয় জরুরী ভিত্তিতে চাল/অর্থ বরাদ্দ দিয়েছেন।
0 coment rios: