স্নেহেন্দু বিকাশ, পাইকগাছায় রুপ কুমার ( এম এ) নামে এক যুবকের অকাল মৃত্যুর পিছনে দায়ী কে? নিয়তি, নাকি শ্বাশুড়ি লাভলী মন্ডলের কথিত অভিশাপ বা মানতে তার মৃত্যু হলো ? নাকি গোপন কোন ব্যধি বা অন্য কোন কারণ। গত ১৬ দিনেও এ রহস্যের জট খোলেনি। ৩ মাস পুর্বে হতভাগ্য রুপ কুমার'কে ভালো বেসে বিয়ে করে সংসার বাঁধেন অনার্স পড়ুয়া রিয়া মন্ডল।
নিয়তির কি পরিহাস অকালে সে স্বামী হারা হলো? ভবিষ্যতে তার ঠাই কোথায় হবে এ নিয়ে নানান প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছিল। শেষ পর্যন্ত ধর্মীয় বিধান মতে রুপ কুমারের আত্মার শ্রাদ্ধ-শান্তি'র পর ১৯ নভেম্বর সন্ধ্যায় দু'পক্ষের সালিশী সভায় সোলাদানা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আঃ মান্নান গাজী ও ইউপি সদস্যসহ অন্যান্যদের উপস্থিতিতে রিয়া'কে তার পিতা-মাতা বিকাশ ও লাভলী মন্ডল দম্পতির কাছে তুলে দেন। যা ইউপি চেয়ারম্যান আঃ মান্নান গাজী স্বীকার করেছেন।
জানাগেছে, ৩মাস পুর্বে সোলাদানা ইউপির খালিয়ারচকের যুগোল মন্ডলের ছেলে এনজিও কর্মী রুপ কুমার মন্ডল ভালোবেসে স্থানীয় বিকাশ মন্ডলের মেয়ে রিয়াকে বিয়ে করেন। কিন্তু এ বিয়েতে রিয়ার পরিবার ও অন্যদেরও অসম্মতি ছিল। বিকাশ-লাভলী দম্পত্তি কখনো মেনেও নেয়নি এমনকি নানা ভাবে রিয়া-রুপ কুমারের প্রতি তিরস্কার করেন। এ সময় অভিযোগ উঠে লাভলী মন্ডল রুপ কুমারের ৩ মাসের মধ্যে মৃত্যু কামনা করে স্থানীয় মন্দিরে অভিশাপ দিয়ে মাথা ন্যাড়া হয়ে পূজার মানত করেন।
ঠিক ৩ মাসের মধ্যে গত ৪ নভেম্বর-২৩ তারিখে বাড়ীতে রুপ কুমার তলঠপেটে প্রচন্ড ব্যথা শুরু হয়। এক পর্যায়ে তাকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ও পরবর্তীতে খুলনা-২৫০ শর্য্যা বিশিষ্ট হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ৫ নভেম্বর বিকেলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। পোষ্ট মটেম ছাড়া পরের দিন তড়িঘড়ি করে লাশের দাফন করা হয়। সুত্র বলছেন, রুপ কুমারের পেট ব্যাথার ইতিহাস ছিল।
এদিকে শ্বাশুড়ির মানতের সুত্র ধরে ১০ নভেম্বর সন্ধ্যায় খালিয়ারচকে মন্দিরে রুপ কুমারের বিধবা মা- স্ত্রীসহ পারশেমারি,নুনিয়াপাড়া,সোলাদানা ও ছালুবুনিয়ার শত-শত নারী পুরুষ জড়ো হয়। সভায় স্থানীয় গোলক মন্ডল দাড়িয়ে রুপ কুমারের মৃত্যু ও লাভলী মন্ডলের জোড়া মানত শোধ করার দাবি জানায়। এখানে রুপ কুমার অকাল মৃত্যুতে সকলে কান্নায় ভেঙে পড়ে এক পর্যায়ে এসব মানুষ মৃত্যু কামনায় মানতে'র কথা শুনে বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠেন। স্থানীয়দের অভিযোগ শুনে উপস্থিত ভূষন চক্রবর্তী মানত পরিশোধের ফর্মলা দেন। এখানে কিন্তু বিকাশ-লাভলী পরিবারের কেউ ছিলনা। খোজ নিয়ে জানাযায় এ দম্পতি পরিস্থিতি দেখে গা ঢাকা দেয়। সভায় ভিতরে-ভিতরে কেউ-কেউ প্রশ্ন তোলেন মৃত্যু কামনার মানত সম্পর্কে কোন স্বাক্ষ প্রমান বা মানতে কারোর মৃত্যু হয় কিনা? এটা বিজ্ঞান সম্মত কিনা? কিন্তু এ সময় রুপ কুমারের মা-অনিতা মন্ডলসহ অনেকেই স্বাক্ষদেন লাভলী মন্ডল মন্দিরে এসে মানত করেন।
এক পর্যায়ে সোলাদানা ইউপি চেয়ারম্যান আঃ মান্নান গাজী ঘটনাস্থলে পৌছে গ্রাম বাসির মঙ্গলার্থে সবাই মিলে ধর্মীয় মতে শ্রাদ্ধ ও মানত শোধের কথা বলে সকলকে শান্তিপূর্ন অবস্থানে থাকার পরামর্শ দেন। সর্বশেষ পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে এখন লাভলী মন্ডল মুখ খুলছেন। তিনি জানান,পরিবারের অসম্মতিতে মেয়ে বিয়ে করলে আমরা মেনে নেয়নি। বিয়ে নিয়ে যথেষ্ট তিরস্কার করেছি সত্য,কিন্তু কারোর মৃত্যু কামনা করে কোন মনত করেনি।
0 coment rios: