Thursday, 9 November 2023

পাইকগাছায় আলোচিত জোনাকি সমিতি'তে আমানতের কোটি কোটি টাকা ফেরৎ পেতে ইউএনও'র দারস্থ- শত শত ভুক্তভোগী মানুষের বিক্ষোভ

পাইকগাছায় আলোচিত জোনাকি সমিতি'তে আমানতের কোটি কোটি টাকা ফেরৎ পেতে ইউএনও'র দারস্থ- শত শত ভুক্তভোগী মানুষের বিক্ষোভ
পাইকগাছায় আলোচিত জোনাকি সমিতি'তে আমানতের কোটি কোটি টাকা ফেরৎ পেতে ইউএনও'র দারস্থ- শত শত ভুক্তভোগী মানুষের বিক্ষোভ

পূর্ণ চন্দ্র মন্ডল, পাইকগাছা ::দু'হাতে লাঠি ভর দিয়ে করুণ দৃষ্টিতে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে আছে সরল ৩ নং ওয়ার্ডের প্রতিবন্ধী ছখিনা বিবি (৬৪)। জিজ্ঞাসা করতেই কান্না জড়িত কন্ঠে বলেন, বাবা, আমি প্রতিবন্ধী। রোজগার করতে পারিনা। অভাবের সংসার। বাপের বাড়ির আড়াই শতক জমি বিক্রি করে ৫০ হাজার টাকা দিছি। পাঁচ বছর পর একলাক টাকা দেবার কতা বলে। আমার মেয়িরাও অনেক টাকা দিয়েচে। গোপালপুরে জলিল সানা (৬৫) অধিক লাভের আশায় নিজের গরু, জমি বিক্রয় করে ৫ লাখ, জরিনা এক লাখ আট হাজার, চেঁচুয়ার সাজিদাইটভাটায় কাজের ৩৬ হাজার টাকা, রাড়ুলীর ফজিলা বেগম তার স্বামীর ভ্যান চালানো রোজগারের একলাখ, এরকম নওশের আলী, আ. রাজ্জাকের মত শত-শত ভুক্তভোগীরা l

আলোচিত "জোনাকী গ্রাম উন্নয়ন সমিতি লিঃ"তে আমানতের কোটি‌ কোটি টাকা ফেরৎ পেতে বিক্ষোভ মিছিল করেছে। এরকম ঘটনা হরহমেশাই ঘটেছে পাইকগাছায়। বিভিন্ন সমিতি, বীমা নামধারীরা রকমারি প্রলোভন দেখিয়ে অসহায়তার সুযোগ নিয়ে কোটি কোটি টাকা লুটেপুটে দেদারসে খাচ্ছে। পাইকগাছা সদর, কপিলমুনি সহ বিভিন্ন অঞ্চলে এরকম প্রতারণা নতুন কিছু নয়। 

বারংবার ওই সকল নামধারী রেজিস্ট্রেশন ভুক্ত প্রতিষ্ঠান গুলোর বিচার বা শাস্তির আওতায় না আনায় সাধারণ মানুষ সর্বশান্ত হয়ে পথে বসেছে। আর্থিক সুবিধা নিয়ে বিচারের আশ্বাস বা গ্রাহকদের টাকা ফেরত দেবার কথা বলে কালক্ষেপণ করে এক শ্রেণির দালাল বাটপাররা এসুযোগ নিয়ে থাকে। ভুক্তভোগী দু'একজন কে বেছে বেছে কিছু টাকা দিয়ে ঠান্ডা রাখে। আন্দোলন শিথিল হয়ে যায়। ভুক্তভোগীরা নির্বিকার।

অধিকাংশ নিরীহ অনাথ তাদের আমানত ফেরত পায় না। এবার "জোনাকী গ্রাম উন্নয়ন সমিতি লিঃ" এর কর্তাব্যক্তিরা গ্রাহকদের কয়েক কোটি টাকা আত্মসাৎ করায় শত শত গ্রাহকেরা অসহায় হয়ে পড়েছে।‌ বিভিন্ন ওয়াদা, তালবাহানা মাসের পর মাস, বছর পেরিয়ে গেলেও তাদের কষ্টে অর্জিত টাকা না পেয়ে‌ তারা অবশেষে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার দ্বারস্থ‌ হয়েছেন। 

বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১০ টার দিকে এ সমস্ত গরীর মানুষ তাদের আমানতকৃট টাকা ফেরত পেতে উপজেলা পরিষদ চত্বরে জড়ো হয়ে ইউএনও'র হস্তক্ষেপ কামনা করেন।  ভুক্তভোগীদের সাথে কথা হলে আরো জানান, সমিতি'র মালিক-কর্মচারী ৬ মাস ধরে হয়রানি করছেন। এদের মধ্যে বৃদ্ধ-বৃদ্ধা, ভিক্ষুক, দিনমজুর , প্রতিবন্ধি নারী-পুরুষ রয়েছেন। উপজেলা নির্বাহী অফিসারের হস্তক্ষেপ চেয়ে ভিলেজ পাইকগাছার বাসিন্দা লাশকাটা মতিন জানান, বইয়ের মেয়াদ শেষ হবার পরেও, সমিতি'র কোন টাকা দিতে পারছে না, যার ফলে টাকার অভাবে তিনি মেয়ের বিবাহ দিতে পারছেন না। মতিন সহ উপস্থিত সমিতি সদস্যরা বলেন, জোনাকি সমবায় সমিতি লিঃ এর মালিক কাউন্সিলর আলাউদ্দীন গাজী, মোহাম্মদ আলী গং ও  সমিতি আদায়কারী কবিতা রানী দাশ ও সালমা সমিতি'র হিসাব-নিকাশ নিয়ে একাধিক বসাবসি করলেও কোন সমাধান মেলেনি। মালিক কর্মচারীরা টাকার হিসাব নিয়ে পরস্পরকে দোষারোপ করছেন। যার ফলে দীর্ঘদিন  গ্রাহকদের আমানতে'র টাকা পাচ্ছেনা।  

এতে স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক নষ্ট হয়েছে এমনকি  অনেকের সংসার ভাঙার পথে এমন মন্তব্য করেছেন ভুক্তভোগীরা। পরিস্থিতির এক পর্যায়ে  উপজেলা পরিষদের মাঠে শত-শত মানুষের বিক্ষোভ দেখে  উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও দু'ভাইস চেয়ারম্যান এগিয়ে আসেন। এ সময় ভুক্তভোগীরা কান্নায় ভেঙে পড়ে টাকার দাবিতে সোচ্চার হন। এ সময় উপজেলা নির্বাহী অফিসার মুহাম্মদ আল আমিন ভুক্তভোগী গরীবের টাকা আদায়ের ব্যাপারে সর্বোচ্চ ভূমিকা রাখার কথা বলেন।  

জনপ্রতিনিধি বা মালিক যেই হোক না কেন কেউ আইনের উর্ধে নয়। তিনি তদন্ত করে টাকা আদায়ের চেষ্টা করার আশ্বাস প্রদান করেন। এ সময উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান শিয়াবুদ্দীন ফিরোজ বুলু ও লিপিকা ঢালী, গদাইপুর ইউপি চেয়ারম্যান শেখ জিয়াদুল ইসলাম জিয়া বিক্ষুব্ধ ভুক্তভোগীদের বুঝিয়ে স্ব-স্ব বাড়িতে পাঠিয়ে দেন। এব্যাপারে সুধী জনেরা জানান, দরিদ্র অসহায় নিরীহ মানুষের টাকা আত্মসাৎ করে সমাজের এক শ্রেণির মানুষ নামে বেনামে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, অট্টলিকা, জায়গা জমি ক্রয় করে রাতারাতি বনেদি হচ্ছে। ভুক্তভোগীরা কোথাও বিচার পাই না। এব্যাপারে তারা ভুক্তভোগীদের সাথে সুর মিলিয়ে কষ্টে অর্জিত আমানত ফিরে পেতে স্থানীয় সংসদ, উপজেলা চেয়ারম্যান,  ইউএনও সহ উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।


শেয়ার করুন

Author:

Etiam at libero iaculis, mollis justo non, blandit augue. Vestibulum sit amet sodales est, a lacinia ex. Suspendisse vel enim sagittis, volutpat sem eget, condimentum sem.

0 coment rios: