![]() |
শিরিষ গাছের ডালের আঠা সংগ্রহে হিড়িক |
পূর্ণ চন্দ্র মন্ডল, পাইকগাছা :আশানুরুপ মূল্য পাওয়ায় শিরিষ গাছের ডালে লেগে থাকা আঠা জাতীয় প্রলেপ সংগ্রহের হিড়িক পড়ে গেছে। গত এক মাস ধরে উপজেলার প্রতিটি গ্রামে মহাধুমধামের সাথে এই প্রলেপ সংগ্রহের কাজ চলছে। কাজকর্ম ও নাওয়া খাওয়া ছেড়ে দিয়ে গ্রামের নারী-পুরুষ ও শিশু-বৃন্ধসহ বিভিন্ন পেশার মানুষ শিরিষ গাছের ডালে লেগে থাকা এই আঠা জাতীয় প্রলেপ সংগ্রহ করছে। তারা দাম পাচ্ছে আশানুরুপ। তাই আঠা লাগানো ডাল সংগ্রহে বিভিন্ন এলাকায় ঘুরেঘুরে ডাল ক্রয় করছে। শিরিষ গাছের ডালের আটা কোথায় যাচ্ছে, সেটা কেউ সঠিকভাবে তারা বলতে পারছে না।
লোক মুখে শোনা যাচ্ছে, কেউ বলছে ঢাকায় যাচ্ছে আবার কেউ বলছে এটি ভারতে নিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু নিয়ে কি করা হচ্ছে, সেটাও সঠিক ভাবে কেউ বলতে পারছে না। আর কোথায় যাচ্ছে তা নিয়ে সংগ্রহকারি, ক্রেতা ও বিক্রেতার কোন মাথা ব্যাথা নেই। তারা টাকা পাচ্ছে বিক্রি করছে। প্রতিদিন সন্ধ্যায় উপজেলার কপিলমুনি ও শ্যামনগর বাজারে বিক্রি হচ্ছে। বাহিরের ব্যবসায়ীরা এসে কিনে নিয়ে যাচ্ছে। স্থানীয় বিক্রেতা মোঃ সাইদুল গাজী, রহমত আলী, ফরিজুল জানান, কপিলমুনি হাসপাতালের সামনে ও মালতে সন্ধ্যায় হাট বসে। বাহিরের ব্যাপারীরা এসে কিনে নিয়ে যায়।
প্রতিদিন ভোর হতে স্থানীয় ক্রেতারা গ্রামে গ্রামে গিয়ে এগুলো কিনে নিচ্ছে। গাছ থেকে ডাল কেটে শত শত ভ্যান ও ইজিবাইক বোঝাই করে বাড়ি নিয়ে আঠা ছাড়িয়ে বিক্রি করছে। এতে আয় হচ্ছে ভাল। শত শত মানুষ বিকল্প আয় হিসেবে এই কাজে ব্যস্ত সময় পার করছে। জানা গেছে, নওগাঁ ও রাজশাহীতে গালা,পালিস, রং তৈরির কেমিক্যাল কারখানা রয়েছে। এ বিষয়ে কপিলমুনি বাজারের ব্যবসায়ী নারাণ চন্দ্র সিংহ বলেন, শিরিষের আঠা রাজশাহী ও নওগাঁয় যাচ্ছে, সেখানে কারখানা আছে। মেশিনে রিফাইনিং করে মণ্ড তৈরি করা হয়। এদিয়ে ফর্নিচারের পালিস করা গালা, সিল গালা সহ বিভিন্ন কেমিক্যাল জাতিয় দ্রব্য তৈরি করা হয়। পাইকগাছার নতুন বাজারের কাঠ ব্যবসায়ী সবুর হোসেন বলেন, আমি তিনটি শিরিষ গাছ কিনেছি ১৭ শত টাকায়। আর মেলেকপুরাইকাঠি গ্রামের মনিরুলের নিকট তিনটি গাছের আঠার প্রলেপ লাগা চিকন ডাল বিক্রি করেছি ২ হাজার ৫শত টাকায়।
চিকন ডালগুলির ওজন এক মন হতে পারে। আঠা লাগা শিরিষের ডালের ব্যাপক চাহিদা। কে কার আগে ডাল কিনতে পারবে তার জন্য ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন এলাকায় ছুটে বেড়াছে। ব্যবসায়ী সাইদুর জানান,আমরা গ্রামে গ্রামে গিয়ে গাছের ডাল ক্রয় করে গাছ থেকে সেগুলো নিজেরা ভেঙে নিয়ে আসছি। সারাদিন ডাল ক্রয় করে সন্ধ্যায় বাড়িতে গিয়ে আঠা গুলো পরিস্কার করে ক্রেতার কাছে বিক্রি করে দেই। ডাল থেকে আঠার মত প্রলেপ ছাড়াতে কেজি প্রতি ৫০ টাকা দিতে হয়। এ আঠাগুলো সংগ্রহ করে বস্তায় ভরে হাটে বিক্রি করা হচ্ছে। আর ডাল থেকে ছাড়ানো এ আঠা কেজি প্রতি ২শত টাকা থেকে ২৫০টাকা দরে বিক্রয় করছি। এতে প্রতিদিন ৩ জনের প্রায় ৩ থেকে ৪ হাজার টাকা লাভ হয়।
সাতক্ষীরা জেলার তালা থেকে পাইকগাছার কপিলমুনিতে আঠা ক্রয় করতে আসা আব্দুল হাই, তার ছেলে ইমদাদুল বিশ্বাস বলেন, আমরা গাছের ডাল ক্রয় করছি। যে গাছের ডালে যেমন আঠা আছে, সে গাছ সেই রকম মূল্যে ক্রয় করছি। ইতিমধ্যে ৩টি গাছের ডাল ক্রয় করেছি। নিজেরা গাছে উঠে ডাল ভেঙ্গে এনে আটি বেধে রাখছি। ভ্যানে করে বাড়ি নিয়ে যাবো। সন্ধ্যায় বাড়িতে গিয়ে ডাল থেকে আঠা গুলো ছাড়িয়ে বিক্রয় করবো। কয়েক বছর যাবত উপকূল এলাকার শিরিষ গাছের ডাল থেকে আঠা ঝরে যাচ্ছে ও ডাল শুকিয়ে যাচ্ছে। কি কারণে আঠা ঝরে ডাল শুকিয়ে যাচ্ছে তার রোগ উদঘটন হয়নি।
আর আঠা ঝরে এক পযায় শতশত গাছ মরে মরে যাচ্ছে। ভোর হলেই শত শত মানুষ গ্রামে গ্রামে এসে একেবারে উৎসবমুখর পরিরেশে শিরিষ গাছের এই আঠা সংগ্রহের জন্য ডাল ক্রয় করছে। ছোট ছোট শিশু, বৃদ্ধ, নারী পুরুষ মিলে সামান্য টাকার লোভে যেভাবে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে গাছে উঠে আঠা লাগানো চিকন ডাল কাটছে। বিশেষ করে মরা গাছে উঠে এই ডাল ও আঠা সংগ্রহ করছে তাতে ভয় হচ্ছে। ঝুঁকি নিয়ে গাছের নরম ডালে বসে আঠা লাগানো চিকন ডাল সংগ্রহ করতে গিয়ে বড় ধরণের দূর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে তার আশঙ্কাও রয়েছে। তারপরও ঝুঁকি নিয়ে তারা শিরিষ গাছের মাথায চড়ে চিকন ডাল সংগ্রহ করছে।
0 coment rios: